SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Social Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - চল বিদ্যুৎ (Current Electricity) | NCTB BOOK

আমরা আগের অধ্যায়ে দেখেছি যে যদি দুটো ভিন্ন বস্তুর পটেনশিয়াল বা বিভবের মাঝে পার্থক্য থাকে তাহলে যেটার বেশি পটেনশিয়াল সেখান থেকে যেটার পটেনশিয়াল কম সেখানে চার্জ বা আধান প্রবাহিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত পটেনশিয়াল দুটো সমান না হচ্ছে চার্জের প্রবাহ হতেই থাকে। চার্জের এই প্রবাহ হচ্ছে তড়িৎ বা বিদ্যুতের প্রবাহ, আমরা যেটাকে সাধারণভাবে “ইলেকট্রিসিটি” বলি, যেটা দিয়ে লাইট জ্বলে, ফ্যান ঘুরে, মোবাইল টেলিফোন চার্জ দেওয়া হয়। 

Content added By
Content updated By

একটা বিষয় নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য থাকলেই শুধু বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়, তাই আমরা যদি বিদ্যুৎ প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন রাখতে চাই তাহলে পটেনশিয়ালের পার্থক্যটাও বজায় রাখতে হবে, সেটাকে কমে সমান হয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। যদি দুটো ধাতব গোলকের একটির মাঝে ধনাত্মক চার্জ দিয়ে সেখানে একটি পটেনশিয়াল তৈরি করে চার্জবিহীন অন্য গোলকটির সাথে একটা তার দিয়ে জুড়ে দিলে বিদ্যুতের প্রবাহ শুরু হবার সাথে সাথে পটেনশিয়াল বা বিভবের পার্থক্য কমতে থাকবে এবং মুহূর্তের মাঝে দুটি পটেনশিয়াল সমান হয়ে যাবে। ধারক বা ক্যাপাসিটরের দুটো সমান্তরাল ধাতব পাতের মাঝে আধান বা চার্জ জমা রেখে বিভবের পার্থক্য তৈরি করা সম্ভব। ধারকের সেই দুটো পাত একটা তার দিয়ে জুড়ে দিলেও মুহূর্তের মাঝে পুরো চার্জ প্রবাহিত হয়ে তাদের বিভব সমান হয়ে যাবে। কাজেই বুঝতেই পারছ আমরা যদি ব্যবহার করার মতো সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ চাই তাহলে অন্য কোনো পদ্ধতি দরকার যেটা এমন একটা পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য তৈরি করে দেবে যেন চার্জ প্রবাহিত হলেও তার পার্থক্য কমে না যায়। তোমরা সবাই সে রকম পদ্ধতি দেখেছ, এগুলো হচ্ছে ব্যাটারি সেল এবং জেনারেটর। ব্যাটারি সেলের ভেতর রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পটেনশিয়ালের পার্থক্য তৈরি করা হয়, সেখান থেকে চার্জ প্রবাহ করা হলে রাসায়নিক দ্রব্যগুলো খরচ হতে থাকে, যখন রাসায়নিক দ্রব্যগুলো শেষ হয়ে যায় তখন ব্যাটারি সেল আর বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে না। আমরা সাধারণ যে ব্যাটারি সেলগুলো দেখি সেগুলোর বিভব পার্থক্য হচ্ছে 1.5 ভোল্ট। 

তোমাদের স্কুলে কিংবা বাসায় যে ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই আছে সেখানে তোমরা সবাই দেখেছ সেটি ব্যবহার করার জন্য সব সময় দুটো পয়েন্ট থাকে, তার একটাতে থাকে কম পটেনশিয়াল বা বিভৰ অন্যটাতে বেশি, এই পার্থক্যটা বজায় রাখে জেনারেটর, যেটি ক্রমাগত পটেনশিয়াল পার্থক্য তৈরি করতে থাকে। একটা ব্যাটারি সেল বা একটা জেনারেটরে ক্রমাগত বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য ক্রমাগত চার্জকে কম পটেনশিয়াল বা বিভব থেকে বেশি পটেনশিয়াল বা বিভাবে হাজির করে রাখতে হয় এবং এর জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। যদি কোনো ব্যাটারিতে Q চার্জকে কম পটেনশিয়াল থেকে বেশি পটেনশিয়াল আনতে w পরিমাণ কাজ করতে হয় তাহলে এই ব্যাটারি সেলের তড়িৎ চালক শক্তি বা ইএমএফ হচ্ছে: 

                                                                    EMF=WQ

ব্যাটারি সেল বা জেনারেটর, যেগুলো বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করে তার তড়িৎ চালক শন্তি বা ইএমএফ থাকে। যখন কোনো ব্যাটারি সেল বা জেনারেটরকে কোনো সার্কিটে লাগানো হয় তখন এই তড়িৎ চালক শক্তিই চার্জকে পুরো সার্কিটের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে আনে। একটা ব্যাটারি যে পরিমাণ পটেনশিয়াল তৈরি করে সেটাই হচ্ছে তার তড়িৎ চালক শক্তি(Electromotive Force) বা ই এম এফ এটাকে বলা হচ্ছে ফোর্স বা "বল” বাংলায় বলছি “শক্তি”।কিন্তু প্রকৃত পক্ষে “ইএমএফ” বা “তড়িৎ চালক শক্তি" বলও নয় আবার শক্তিও নয়।তোমাদের আগে বলা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানে “বল” “শক্তি” এই বিষয়গুলো খুবই সুনির্দিষ্ট, ইচ্ছেযতো একটা শব্দের জায়গায় অন্য শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে সেটি করা হয়ে গেছে।তোমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই কারণ  যেহেতু একটা ব্যাটারি সেল বা জেনারেটর যে পরিমাণ  পটেনশিয়াল তৈরি করে সেটাই হচ্ছে তার ইএমএফ তাই তৈরি করা সম্ভব।আমরা সেখান থেকেই শুরু করব, পটেনশিয়াল কথাটি দিয়েই সব কাজ করে ফেলব, দেখবে কোনো সমস্যা হবে না।আমরা আগেই বলেছি পটেনশিয়ালের মানটি পুরুত্বপূর্ণ নয়, তার পার্থক্যটুকু গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেখবে অনেক সময় একটা ব্যাটারি সেলের এক মাথার পটেনশিয়ালের মান ভিন্ন করে ফেলা সম্ভব, কিন্তু পার্থক্যটা সব সময়ই সমান থাকবে। 

Content added By
Content updated By

পরিবাহী পদার্থ: আমরা যদি পদার্থের গঠনটা ভালো করে বুঝে থাকি তাহলে একটা বিষয় খুব ভালো করে জেনেছি। কঠিন পদার্থে তার অণু-পরমাণু শক্ত করে নিজের জায়গার বসে থাকে। তাপমাত্রা বাড়লে তারা নিজের জায়গায় কাঁপাকাঁপি করতে পারে কিন্তু সেখান থেকে সরে অন্য জায়গায় চলে যায় না। তোমাদের রসায়ন বইয়ে তোমরা যখন ধাতব বন্ধন পড়েছ সেখানে দেখেছ, ধাতব পরমাণুর কিছু ইলেকট্রন প্রায় যুক্ত অবস্থায় থাকে সেগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। সেজন্য আমরা সেগুলোকে বলি পরিবাহী পদার্থ। সোনা, রূপা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম এগুলো সুপরিবাহী পদার্থ। পরিবাহী পদার্থ দিয়ে চার্জকে স্থানান্তর করা যায়, তবে সব সময় মনে রাখতে হবে এই স্থানান্তর হয় ইলেকট্রন দিয়ে, বিদ্যুতের প্রবাহ হয় ইলেকট্রন দিয়ে, নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রন। 

অপরিবাহী পদার্থ: যে পদার্থের ভেতর তড়িৎ বা বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য কোনো মুক্ত ইলেকট্রন নেই সেই পদার্থগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ। প্লাস্টিক, রাবার, কাঠ, কাচ এগুলো হচ্ছে অপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ। মূলত অধাতুগুলো বিদ্যুৎ অপরিবাহী হয় । 

অর্ধপরিবাহী পদার্থ: কিছু কিছু পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি, তবে তাপমাত্রা বাড়ালে পরিবহন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই ধরনের পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর বলে। সিলিকন বা জার্মেনিয়াম সেমিকন্ডাক্টরের উদাহরণ। এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

 

Content added By

আমরা দেখেছি দুটো ভিন্ন বিভবের বস্তুকে পরিবাহী দিয়ে সংযুক্ত করে দিলে আধানের প্রবাহ শুরু হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পটেনশিয়াল সমান না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আধানের প্রবাহ হয় এবং আমরা বলি তাদের মাঝে বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে। তোমাদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই এখন একটু ভাবনার মাঝে পড়েছ, কারণ আমরা যখন আধান বা চার্জের প্রবাহ দিয়ে দুটি ভিন্ন বিভবের মাঝে সমতা আনার কথা বলেছি তখন কিন্তু একবারও বলিনি এটা শুধু নেগেটিভ চার্জের জন্য সত্যি, কারণ শুধু নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। পজিটিভ চার্জের বেলায় তাহলে কী হয়? পজিটিভ আয়ন তো খুবই শক্তভাবে নিজের জায়গায় আটকে থাকে, তাহলে কেমন করে পজিটিভ চার্জ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়? 

তোমরা নিশ্চয়ই কী ঘটে সেটা অনুমান করে ফেলেছ, ইলেকট্রনের অভাব হচ্ছে পজিটিভ চার্জ। তাই ইলেকট্রনকে সরিয়ে অভাব আরো বাড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে পজিটিভ চার্জ সরবরাহ করা। 

আধান বা চার্জের প্রবাহ হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা তড়িৎ প্রবাহ। আমরা এতক্ষণ সাধারণভাবে এটা বোঝার চেষ্টা করেছি, এখন এটাকে আরো একটু নির্দিষ্ট করা যাক। বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ বলতে আমরা সময়ের সাথে চার্জ প্রবাহের হারকে বোঝাই অর্থাৎ t সময়ে যদি Q চার্জ প্রবাহিত হয় তাহলে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে: 

                                                                                    I=Qt

আধান বা চার্জের একক কুলম্ব C এবং সময়ের একক সেকেন্ড হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার A। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা কিন্তু চার্জের একক বের করার জন্য বলেছিলাম এক সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় সেটাই হচ্ছে কুলম্ব। তড়িৎ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ (কারেন্ট) হচ্ছে চার্জ প্রবাহের হার,একটি তারের এক প্রান্ত(A) থেকে অন্য প্রান্তে(B) যদি 1 অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয় তার অর্থ 1 কুলম্ব পজিটিভ চার্জ  গিয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ 1 কুলম্ব চার্জের সমপরিমাণ ইলেকট্রন B থেকে A তে গিয়েছে। কাজেই তোমরা দেখতে পাচ্ছ, বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক হচ্ছে ইলেকট্রন প্রবাহের দিকের উল্টো। (ইলেকট্রনের চার্জকে পজিটিভ ধরে নিলেই সব সমস্যা মিটে যেত কিন্তু সেটার জন্য এখন দেরি হয়ে গেছে।) 

Content added || updated By